নিউজ

***জরুরি সংবাদ :বঙ্গভবনের পথে হামিদ   ❖ কাজীপাড়ায় ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা   ❖ খালেদা মাইনাস, এখন আওয়ামী লীগকেও মাইনাসের চেষ্টা   ❖ কাল থেকে বিএনপির ফের ৩৬ ঘণ্টার হরতাল   ❖ মাটির তৈরি শৌখিন তৈজস, রফতানি হচ্ছে বিদেশে   ❖ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের রোল মডেল   ❖ শিক্ষিকার ছবি অশ্লীলভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে চাকরিচ্যুতি!   ❖ বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট আসছে, আকার হবে দু’লাখ কোটির বেশি   ❖ যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত তিন জামায়াত নেতা   ❖ হেফাজতের দাবি আর ভোট রাজনীতির হিসাব-নিকাশ   ❖ ঘন ঘন হরতালে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে না   ❖ শাহবাগে গণজাগরণ ও মহাখালীতে নির্মূল কমিটি মঞ্চে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা   ❖ ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ॥ আটক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল চীনে তৈরি ॥ ব্রি. জে. হাসান   ❖ চার ঘণ্টা সংঘর্ষ ॥ নাটোরে আ’লীগের সমাবেশে বিএনপি জামায়াতের হামলা আহত ৩০   ❖ সাঁতারে প্রথমদিনেই তিনটি নতুন রেকর্ড   ❖ শেখ জামালের ঘাম ঝরানো জয়   ❖ হাটহাজারীতে অস্ত্রসহ ৩ ছিনতাইকারী আটক   ❖ ডিএসইতে আড়াই মাসে সর্বনিম্ন লেনদেন   ❖ তহবিল সঙ্কটে পিছিয়ে গেল সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল  

   « »

Monday, April 22, 2013

কাল থেকে সারাদেশে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল : ফখরুলসহ ৭ শীর্ষ নেতার জামিন নামঞ্জুর : মওদুদ, বুলু ও এ্যানির জামিন

স্টাফ রিপোর্টার:

 কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি, হামলা-মামলা বন্ধ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আগামীকাল ও পরশু সারাদেশে হরতাল পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টা এ হরতাল পালিত হবে। ১৮ দলীয় জোটের সভা শেষে রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ হরতালের ঘোষণা দেন। এছাড়া একই দাবিতে ২৭ এপ্রিল জেলায় জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিরোধী জোট। এর আগে বিএনপির শীর্ষ দশ নেতার মধ্যে তিনজনের জামিন মঞ্জুর করে ও অপর সাতজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত। সংসদ সদস্য বিবেচনায় জামিনপ্রাপ্তরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব (দফতর) রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের জামিন নামঞ্জুর করা হয়।
গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন শুনানি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সানাউল্লাহ মিয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পিপি শাহআলম তালুকদার।
গত ৯ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ শীর্ষ নেতাদের জামিনের জন্য পৃথক সাত মামলায় মোট ১৯টি আবেদন করা হয়েছিল। ওই দিন এ সংক্রান্ত শুনানির জন্য গতকাল দিন ধার্য করা হয়েছিল।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল বিএনপির শীর্ষ ১০ নেতা দ্রুত বিচার আইনের ৩টি ও দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের পৃথক ৪টি মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। এদিন তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৬ মার্চ ঢাকার নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, বেইলি রোড, ভিকারূননিসা নূন স্কুলের রাস্তায় ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপি নেতাদের নামে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
কেন্দ্রিয় নেতাদের জামিন না দেয়ার প্রতিবাদসহ নানা দাবি ৩৬ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা শেষে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৮ দলীয় জোটের অধিকাংশ নেতাকে সরকার কারাবন্দি রেখেছে। এভাবে আন্দোলন দমানো যাবে না। কেবল তিনজন নেতাকে জামিন দেয়া হয়েছে। সব নেতা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি চলবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারাদেশে দলের প্রায় দুই শতাধিক শীর্ষ নেতা কারাগারে আছেন। তিনজনের জামিনের কথা শুনেছি। সরকার জামিনের পরও অনেক ষড়যন্ত্র করে। আমাদের সব শীর্ষ নেতাকে মুক্তি দিতে হবে।
নতুন স্পিকারের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও দলের মধ্যে আলোচনা হয়নি। আলোচনার পর দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণির সভাপতিত্বে গুলশানের কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদী, কল্যাণ পার্টির আবদুল মালেক চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, ইসলামিক পার্টির আবদুর রশিদ প্রধান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দিন মতিন, জাগপার আসাদুর রহমান খান, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ডেমোক্র্যাটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস প্রমুখ।


Saturday, April 13, 2013

চৈত্র সংক্রান্তি, বিদায় ১৪১৯


চৈত্র সংক্রান্তি, বিদায় ১৪১৯


11


চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা সনের শেষ দিন। শেষ দিন ঋতুরাজ বসন্তেরও। বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়।
৩০ চৈত্র শনিবার মহাকালের বুকে ঠাই নিচ্ছে ১৪১৯। ১৪২০ বঙ্গাব্দের শুরু হবে রোববার। বৈশাখ বন্দনায় মেতে উঠবে বাঙালি।
চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে ফেলে আসা বছরের হিসাবের খাতাকে লোকাচার-পার্বণে বিদায় জানানো হবে। নতুন উদ্যমে, মঙ্গল প্রত্যাশায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবে।
চৈত্র সংক্রান্তি বিশেষ লোক উৎসব। প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে এক বৃহত্তর লোক উৎসবে পরিণত হয়েছে দিনটি।
নানা আচার-অনুষ্ঠান আর হালখাতার প্রস্তুতি নেওয়ার দিনও শনিবার।
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর। বাঙালি বরণ করে নেবে বাংলা নববর্ষকে। সে সঙ্গে মূল্যায়ন হবে বিগত বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা। চৈত্র সংক্রান্তি বাংলার লোক সংস্কৃতির এমন এক অনুষঙ্গ, যা সর্বজনীন উৎসবের আমেজে বর্ণিল।
বছরের শেষ দিনে যেমন নানা আয়োজনে বর্ষকে বিদায় জানানো হয় তেমনি চৈত্রের শেষ দিনে বৈশাখ বন্দনায় মেতে ওঠে বাঙালি।
‘নব আনন্দ বাজুক প্রাণে’- এ মঙ্গল কামনার মাধ্যমে বিগত বছরের গ্লানি মুছে ফেলতে আবহমান বাঙালি মেতে উঠছে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে।
শনিবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ১৪১৯ বঙ্গাব্দের সাফল্য-ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ, হতাশা ও ক্লান্তি হারিয়ে যাবে মহাকালের বুকে। নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা করবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২০। সনাতন ধর্মমতে, বছর ঘুরতে ঘুরতে সূর্য তার আলোক আর তেজঃশক্তিকে নিঃশেষ করে আলোকশূন্য হয়ে পড়তে পারে। সূর্যের তাপই শস্যের ফলনে সাহায্য করে, বারিপাত আনে, সুফলা হয় ধরা। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে তাই উদ্বিগ্ন কৃষকরা বাঁচার তাগিদে বর্ষার আগমনের দ্রুততা কামনা করেন। নানা মাত্রিক উৎসবের মাধ্যমে সূর্যের কৃপা প্রার্থনা করেন তারা।
এখন সূর্য তার রুদ্ররূপে প্রতিভাত। তাই চৈত্র সংক্রান্তিতে নানা উপাচারের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বাংলা মাসের শেষ দিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকেও সনাতন ধর্ম মতে পূণ্যের কাজ বলা মনে করা হয়।
চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশের নানা স্থানে হবে মেলা, উৎসব। রাজধানীতেও কয়েক বছর ধরে এ উৎসব ব্যাপকতা লাভ করেছে। কয়েকটি সংগঠন দিবসটি নানা আয়োজনে পালন করবে।

Monday, March 18, 2013

২৬ মার্চ: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস


মোহাম্মেদ আদিব
নিউজডেস্ক, মানবাধিকার চিত্র.কম
স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা


২৬ মার্চ সোমবার মহান স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি অত্যন্ত গৌরবোজ্জল অবিস্বরণীয় একটি দিন।

হাজার বছরের সংগ্রাম পেছনে ফেলেজাতির জীবনে নেমে এল ২৫ ও ২৬ মার্চ। দুঃস্বপ্ন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার অভাবনীয় সংমিশ্রণ ঘটল বাঙালির জীবনে। পাকিস্তানিদের লক্ষ্য ছিল বাঙালির জাতিসত্তা নিশ্চিহ্ন করা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন স্বাধীনতার। তবে দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েরাজনীতিতে বিতর্ক চলছে। ঐতিহাসিক দলিলপত্র সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই স্বাধীনতার ঘোষক। জিয়াউর রহমান তাঁর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।

 
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহকর্মী অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি দেশবাসীর মতো আমাদেরও বিনম্র শ্রদ্ধা। একাত্তরের রণাঙ্গনে এবং দেশের নানা প্রান্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হামলায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন,তাদের জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন। স্বাধীনতার জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও পবিত্র স্মৃতি চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা যারা এনেছেন তাদেরেএ জাতি ভুলবে না। তাদের স্বজনদের প্রতিও আমাদের গভীর সহমর্মিতা।
একাত্তরের সেই কঠিন সময়ে বিশ্বের যেসব দেশ আমাদের প্রতি সহায়তা-সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পাকিস্তানের ঘৃণ্য গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, তাদের প্রতিও আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সর্বশেষে , দেশবাসীকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

Thursday, March 14, 2013

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন ও আমাদের পুলিশ !



আমরা সবাই জানি, জনগণের অর্থেই লালিত-পালিত হয় পুলিশ এবং পুলিশের সব ব্যয় জনগণের অর্থেই মেটানো হয়। ফলে মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও পুলিশের ওপরই বর্তায়। তাই, পুলিশ জনগণের বন্ধু, শত্রু নয়।
কিন্তু পুলিশ অনেক সময়েই সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী ভূমিকা পালন করে থাকে, ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর পক্ষেই অবস্থান নিশ্চিত করে থাকে, জনগণের পক্ষে নয়। যারা সমাজে আইনের প্রয়োগ ঘটাবে, তারা নিজেরাই যদি আইন না মানে তবে সমাজে আইনের শাসন নয় বরং বেআইনি শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য।

সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় রোগ নিরাময়ের পূর্বশর্ত। তেমনি পুলিশের এই বেপরোয়া আচরণের যৌক্তিক কারণ খুঁজে বের করাও এ থেকে উত্তরণের প্রধান উপায়। ক্ষমতায় থাকাকালে প্রত্যেক সরকারই মনে করে পুলিশ দিয়ে বিরোধী দল পেটানোর জন্য পুলিশকে অখুশি করা যাবে না। কিন্তু তারাই যখন বিরোধী দলে যায়, তখন উল্টো পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়। এভাবে ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে পুলিশের ব্যাবহার আদতে এ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্ষতিই করেছে। সবাই তাদের দলীয় স্বার্থে ব্যাবহার করে, কিন্তু তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি থাকে উপেক্ষিত।
পুলিশ কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে জনগণের জানমালের ক্ষতি হলে পিআরবির ১৫৭নং রেগুলেশন অনুযায়ী এতদিন নিরপেক্ষ তদন্তের বিধান ছিল।
৫ জুন ২০০৬ তারিখে জারিকৃত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (সভা, সমাবেশ, মিছিল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ওই বিধিমালার ১০নং বিধিতে পুলিশ কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার তথা গুলিবর্ষণ করা হলে তার নিরপেক্ষ তদন্ত নয় বরং পুলিশি তদন্তের বিধান করা হয়েছে।
ওই বিধিমালা পুলিশকে মানুষ মারার যে লাইসেন্স দিয়েছে, তা বাতিল করা না হলে পুলিশ শুধু মানুষ মারবেই না, তা আইনসিদ্ধ বলেও অবলীলায় চালিয়ে দিতে থাকবে।
মেধাবী ছাত্র রুবেলকে পুলিশ নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। হত্যাকারী পুলিশের কী হয়েছে, তা সবাই জানে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিশন বিস্তারিত তদন্ত শেষে পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধকল্পে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল জেলা পর্যায়ে পুলিশের ওপর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণ এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ বাহিনীর ওপর অনুরূপ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু ওই সুপারিশ আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

১৭৫৭ সালে বাংলার ক্ষমতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসীন হয়ে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন করে জমিদারি প্রথা প্রচলন করে।
জমিদাররা প্রকারান্তরে খাজনা আদায় ও তার অংশ কোম্পানিকে প্রদানের দায়িত্ব ছাড়া তার জমিদারির হর্তাকর্তা শাসক হিসেবে উদ্ভূত হন।
১৮৫৭ সালে সিপাহী যুদ্ধের পর খোদ ব্রিটিশরাজ ভারত উপমহাদেশের ক্ষমতাভার গ্রহণ করেন। অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১৮৬২ সালে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করে পুলিশের বিধি ও কার্যপ্রণালী ধারা প্রণয়ন করা হয়। ফলে জমিদারদের ক্ষমতায় কিছুটা ভাটা পড়লেও পুলিশের সহায়তায় তাদের আধিপত্য পূর্ণ মাত্রায়ই বজায় রাখতে সক্ষম হন।
প্রজাদের স্বার্থ কিছুটা সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশরাজ ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল টেন্যান্সী অ্যাক্ট পাস করেন।
ফলে জমিদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ও ব্রিটিশরাজের কাছে তাদের অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। খাজনা আদায়ের এবং প্রদেয় তদাংশ ব্রিটিশরাজকে পরিশোধ করার দায়িত্ব জমিদারদের থাকলেও খাজনা অনাদায়ের কারণে কাউকে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা জমিদারদের নেই।
এধরনের নানা অসুবিধার কথা ভেবে এবং ঔপনিবেশিক শাসন পাকাপোক্ত ও চিরস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরাজ ১৮৯৮ সালে ফৌজদারি আইন (অ্যাক্ট নং ৫, যা সিআরপিসি নামে পরিচিত), যা মূলত একটি কালো আইন পাস করেন।
উক্ত আইনের ৫৪ সেকশনে পুলিশকে ঢালাওভাবে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া বা কোনো ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত সন্দেহবশে কাউকে আদালতগ্রাহ্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার করতে পারে সে ক্ষমতা দেয়া হয়।
বলা বাহুল্য যে, সিআরপিসি ১৮৯৮-এর শতবর্ষ আগে জন্ম হয়েছিল জনকল্যাণে নয়, বরং নির্দয় একটি আইন হিসেবে ঔপনিবেশিকতার স্বার্থসিদ্ধির প্রেক্ষাপটে।
শতবর্ষের বেশী হলেও এই নির্দয় একটি আইনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

আমাদের পবিত্র সংবিধানের বিধান প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে অথচ আমার সুশাসনের কথা বলছি। হাইকোর্ট বিভাগের গাইডলাইন সম্পর্কে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী এখনও অজ্ঞ।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে বা ৫৪ ধারায় যে কাউকে আটক, ১৬৭ ধারায় তথাকথিত স্বীকারোক্তি আদায়; অতঃপর অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া, কল্পিত ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এবং কর্তব্যরত অবস্থায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালানো এটা বাংলাদেশের প্রশাসনের নিত্ত-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে, আইনই হবে তার হেফাজতকারী।
তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও সম্পূর্ণই আইনের। এটাই মানবাধিকারের কথা।
কিন্তু আইন রক্ষাকারী বাহিনী তা করছে না। ৫৪ ধারায় ধৃত ব্যক্তিকে আইন বা আইন রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দেয়নি বা দিচ্ছে না।
Section 167: Injured accused: Where the police report states that the accused had injuries on his body it is the duty of the Magistrate to inquire as to how the accused received those injuries before remanding him back into police custody. If he does not do so and passes an order of demand automatically his conduct is lightly improper. [1982 PSC (SC-India)]
ধারা ১৬৭‍ঃ আহত আঘাতপ্রাপ্ত আসামীঃ পুলিশ অফিসারের প্রতিবেদনে যদি উল্লেখ থাকে যে, আসামীর শরীরে আঘাত রয়েছে সেক্ষেত্রে পুনরায় আসামীকে রিমান্ডে দেয়ার পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব হবে উক্ত আঘাত সম্পর্কে খোঁজ নেয়া উক্ত আঘাতসমূহ কীভাবে পেয়েছে সে সম্পর্কে তদন্ত করা। এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট যদি যান্ত্রিকভাবে এসব নিয়মাবলী অনুসরণ না করে রিমান্ড আদেশ দেন, তবে তার এরূপ আচরণ কিছুটা হলেও বেআইনী হবে।
Section 167: Detention of accused by the police beyond 24 hours without authority amounts to illegal detention. Court however to see the effect of such detention on any confession made by the accused and recorded. [16 DLR (HCD) 558]
ধারা ১৬৭‍ঃ যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ ছাড়া ২৪ ঘন্টার বেশি সময়কাল পুলিশ হেফাজতে আটক বেআইনী আটক বলে গণ্য হবে। এরূপ বেআইনী আটক থাকাকালীন সময়ে যদি কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকারোক্তি করেন এবং তা লিপিবদ্ধ হয় ঐ দোষ স্বীকারোক্তির প্রভাব সম্পর্কে আদালত তার সুতীক্ষ্ম দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন। [১৬ ডিএলআর (এইচসিডি) ২৬৫]
Under the provisions of section 167 CrPC it is imperative upon the police to forward the accused in person before the Magistrate and the Magistrate shall in exercise of his judicial discretion, pass the order of remand in presence of the accused so as to enable the accused know of the offences, to get assistance if necessary from his lawyers or friends and make objection against the order, place and period of Remand. [133 BKD (HC) 548]
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা বিধান অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে স্বশরীরে ম্যাজিস্ট্রেটরে সম্মুখে হাজির করানো পুলিশের উপর আবশ্যকীয় আদেশ রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে রিমান্ড আদেশ প্রদান করবেন। যাতে আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন। তার পক্ষে আইনজীবি কিংবা বন্ধু বান্ধবের সাহায্যের প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করতে পারেন। রিমান্ড আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। এছাড়া রিমান্ডের স্থান কিংবা সময়কাল সম্পর্কেও আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। [১৩ বিএলডি (এইচ সি) ৫৪৮]
১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এ দেশে সুশৃংখল পুলিশ বাহিনীর গোড়াপত্তন করে। এর আগে এ ধরনের কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, পুলিশের বড়কর্তাদের এ আইনের ব্যাপারে বড়ই গাত্রদাহ।
কারণ হিসেবে তারা দেখিয়ে থাকেন এটি ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত। সন্দেহ নেই, এটি ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি। কিন্তু শুধু এ অজুহাতই কি ওটা বাতিলের জন্য যথেষ্ট? যদি তাই হয়, তাহলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অদ্যাবধি বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌলিক আইন।
পুলিশের বড় কর্তাদের দাবি অনুযায়ী ওই আইনগুলোও বাতিল হওয়া দরকার, যেহেতু সেগুলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত। কিন্তু মুল কারণ ওই আইনের ৪ ধারা, যেখানে উল্লেখ রয়েছে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের সাধারণ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে থেকে জেলা পর্যায়ে পুলিশ সুপার ও অধীনস্থ অন্য অফিসাররা দায়িত্ব পালন করবেন।
১৯৭৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক শাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সার্কুলারের মাধ্যমে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক জেলা পর্যায়ে পুলিশের এসপি ও অন্যান্য অফিসারের এসিআর অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লেখার বিধান স্থগিত করেন। পুলিশ রেগুলেশন (পিআরবি) ১৯৪৩-এর ৭৫ক নং রেগুলেশন বলে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ওই এসিআর লিখতেন।
১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪ ধারার বিধানকে বাস্তবে কার্যকর করার জন্য পিআরবিতে এরকম বিধান করা হয়েছিল। পিআরবি একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত আইনগত রূপ, যার দ্বারা পুলিশ বাহিনী তার সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
এটি ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ভিত্তিতে সৃষ্ট। সত্যিকার অর্থে পিআরবির সামান্য দু-একটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশ বিষয় বাস্তবসম্মত এবং তা দেশ ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পিআরবি’র ৭৫ক নং রেগুলেশনের মাধ্যমে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪ ধারার যে বাস্তবায়ন করা হতো, তা ১৯৭৫ সালের ১০ ডিসেম্বরে তৎকালীন সামরিক শাসকের হটকারী সিদ্ধান্তে অকার্যকর হয়ে যায়।
ফলে আইন থাকলেও এখন তার বাস্তবায়ন নেই। যারা সমাজে আইনের প্রয়োগ ঘটাবে, তারা নিজেরাই যদি আইন না মানে তবে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।